সৌমিত্রদাকে আমি চিনি হাজার বছর ধরে, তিনি আপন নন তো কি? ঢাকা কি কলকাতা যেখানেই দেখা হতো জড়িয়ে ধরতাম।চলচ্চিত্রের শুরুতে তিনি আমার অভিভাবকের মতো দায়িত্ব পালন করেছেন। এমন আপনজনের মৃত্যুতে কষ্টের কথা কিভাবে বর্ণনা করবো? এমনটাই জানালেন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রনায়িকা ফরিদা আক্তার ববিতা।
১৯৭৩ সালে ববিতা অভিনীত অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ সিনেমা মুক্তি পায়। এই সিনেমায় তিনি সৌমিত্র চ্যাটার্জির স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন। প্রশংসিত হন দেশ-বিদেশে।
উপমহাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রায় চল্ললিশ দিনের লড়াই শেষে আজ না ফেরার দেশে চলে গেছেন। ৮৬ বছরে শেষ হলো সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কর্মময় পথচলা। হাসপাতালে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর রবিবার ১২টা ১৫ মিনিটে তিনি জীবনের কাছে পরাস্ত হন। একাধারে তিনি অভিনেতা-নাট্যকার-বাচিকশিল্পী-কবি ও চিত্রকর।
Read More News
ববিতা বলেন, এই করোনা আমাদের সবকিছু এলোমেলো করে দিচ্ছে। কাছের মানুষদের হারিয়ে ফেলছি আমরা। করোনার কারণে সৌমিত্রদা চলে গেলেন, এটা ভাবতেই খারাপ লাগছে। যদিও সৌমিত্রদা আরো নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আমরা যখন ঘরবন্দী তিনি তখন মানসিক শক্তির জেরে বাইরে বেরিয়েছিলেন। এটা ভেবেই খারাপ লাগছে যে সৌমিত্রদা হেরে গেলেন।
সৌমিত্রদা আমার অনেক আপন। একটা সিনেমা করেছি বলে নয়, ওই একটা সিনেমায় সৌমিত্রদা যা দিয়েছেন আমাকে তার জন্য আমি আজীবন তাঁকে কৃতজ্ঞতাভরে মনে রাখবো। মাত্র একটা কি দু’টা সিনেমা করেছি, এরমধ্যে অশনি সংকেতের শুটিঙে অংশ নেই। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর ভয়টা আমার কাটিয়েছেন সৌমিত্রদা, আমার একক শট নেওয়ার তিনি ক্যামেরার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতেন। শুটিং সেট যে আপন জায়গা হতে পারে সেটা সৌমিত্র’দার কাছ থেকেই বুঝেছি। শুটিং সেটেই তিনি ব্যায়াম করছেন। জিজ্ঞেস করি দাদা এখানে কেন? হেসে বলেন, এখানেই সব করতে হবে। সময় কোথায়, সময় তো পাই না। সেই সৌমিত্র দা চলে গেলেন, আমি বলে বোঝাতে পারবো না আমি কি হারালাম।
শুধু অশনি সংকেত ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয় করলেও যোগাযোগ থেকে গিয়েছিল। মাঝেমধ্যেই ঢাকা কলকাতা কিংবা অন্য কোনো শহরে দেখা হলেই কথা হতো। সময়টা অনেক গড়িয়ে গেলেও সৌমিত্র কাছের মানুষ হয়েই ছিলেন ববিতার কাছে।