আজ এ আর রহমানের জন্মদিন। ৫৪-য় পা দিলেন সুরের জাদুকর। নাম-যশ-খ্যাতি সব পেয়েছেন তিনি। কিন্তু এত সাফল্যের পরেও রহমান মাটির কাছাকাছি থাকতেই ভালবাসেন। মৃদুভাষী সঙ্গীত পরিচালকের সমস্ত খেলা হয় সুরের সঙ্গে। নাম না জানা অসংখ্য বাদ্যযন্ত্রের আবিষ্কর্তা তিনিই। নিজের গানে সেইসবের ব্যবহারও করেছেন রহমান। বলিউডে গানের জগতে নতুন প্রতিভাদের প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারেও তাঁর দক্ষতা অসীম।
রহমানের তিন সন্তান আমিন, খতিজা এবং রহিমা। অদ্ভুত ভাবেই এ আর রহমানের ছেলে আমিনের জন্মদিনও আজই, অর্থাৎ ৬ জানুয়ারি।
হিন্দু পরিবারে জন্ম হলেও পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এ আর রহমান। প্রথমে নাম ছিল দিলীপ কুমার। কিন্তু ২৩ বছর বয়সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে দিলীপ হয়ে যান আল্লারাখা রহমান। গুরুতর অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন রহমানের বোন। এক সুফি সাধু তাঁর বোনকে সুস্থ করে তোলেন। এরপরই ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হন এ আর রহমান।
সঙ্গীতের দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে দূরদর্শনের ‘ওয়ান্ডার বেলুন’ অনুষ্ঠানে শিশুশিল্পী হিসেবে নজর কেড়েছিলেন রহমান। একসঙ্গে চারটি কি-বোর্ড বাজানোর দক্ষতা ছিল তাঁর।
Read More News
এ আর রহমান যে সঙ্গীতের দুনিয়ায় অসামান্য প্রতিভা হয়ে উঠবেন এই বিশ্বাস ছিল তাঁর মা করিমা বেগমের। ছেলের প্রাথমিক সঙ্গীতের জ্ঞান শুরু হয় তাঁর হাত ধরেই। মায়ের সঙ্গে বরাবরই আত্মার নিবিড় যোগ ছিল তাঁর। বহুবার বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে সে কথা নিজেই জানিয়েছেন সঙ্গীত পরিচালক। অস্কার থেকে শুরু করে বাকি সমস্ত পুরস্কারের কৃতিত্ব বরাবর মা করিমা বেগমকেই দিয়ে এসেছেন এ আর রহমান। সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন করিমা বেগম।
দক্ষিণী পরিচালক মণিরত্নমই সর্বপ্রথম এ আর রহমানকে সুযোগ দিয়েছিলেন। পরিচালকের ধারনা ছিল সঙ্গীতের জগতে অসামান্য কিছু করে দেখাবে চেন্নাইয়ের এই প্রতিভাবান। ১৯৯২ সালে মণিরত্নমের ‘রোজা’ ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেন রহমান। তাঁর সুরের জাদুতে মুগ্ধ হন সকলে। সিনেমা রিলিজের ২৮ বছর পরেও সমান জনপ্রিয় ‘রোজা’-র সবকটি গান। ২৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পেয়ে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন রহমান। ‘রোজা’-তে তাঁর অসামান্য কাজের জন্য পেয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কারও। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি এ আর রহমানকে। একের পর এক হিট গান তৈরি করেছেন তিনিই।
এ আর রহমানই প্রথম এশীয় সঙ্গীত পরিচালক যিনি একই বছরে ২টি অস্কার জিতেছেন ‘স্লামডগ মিলিওনেয়ার’-এর জন্য। পদ্মভূষণ, পদ্মশ্রী সম্মান প্রাপ্ত এই সঙ্গীত পরিচালক জিতেছেন চারটি জাতীয় পুরস্কারও।
‘স্লামডগ মিলিওনেয়ার’-এর বিখ্যাত গান ‘জয় হো’ প্রথমে সলমন খানের ছবি ‘যুবরাজ’-এর জন্য কম্পোজ করেছিলেন এ আর রহমান। পরে এই গান অন্য ছবিতে অর্থাৎ ‘স্লামডগ মিলিওনেয়ার’-এ ব্যবহৃত হয়। এই ছবি ছাড়াও হলিউডের আরও সিনেমায় কাজ করেছেন এ আর রহমান।
টেলিকম সংস্থা এয়ারটেলের থিম টিউন কম্পোজ করেছিলেন এ আর রহমান। আজও সমান ভাবে জনপ্রিয় এই টিউন। সমীক্ষা অনুযায়ী, বিশ্বের ‘মোস্ট ডাউনলোডেড মোবাইল মিউজিক’-এর খেতাব রয়েছে এয়ারটেলের এই টিউনের মাথায়। ১৫০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এই টিউন ডাউনলোড করেছেন।
রহমানকে সম্মান জানানোর জন্য তাঁর নামে তৈরি হয়েছে রাস্তাও। যদিও এ দেশে নয়, বিদেশে। ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে কানাডার অন্টারিওতে মারখাম এলাকায় রহমানের নামে একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে।