ক্যানসারে আক্রান্ত জনপ্রিয় অভিনেতা আব্দুল কাদের রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে আজ শনিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে এবং অসংখ্য ভক্ত রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শোবিজ অঙ্গনে। অভিনেতার আত্মার শান্তি কামনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার সহকর্মীরা।
ভারতের চেন্নাইয়ের ভেলোর শহরের সিএমসি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর ২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এ অভিনেতাকে। এরপর তাঁর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। গতকাল শুক্রবার মধ্যরাতে তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়।
কাদেরের প্যানক্রিসের (অগ্ন্যাশয়) ক্যানসার জটিল আকার ধারণ করলে গত ৮ ডিসেম্বর চেন্নাইয়ে নেওয়া হয়। বেশ কিছু পরীক্ষার পর ১৫ ডিসেম্বর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জনপ্রিয় অভিনেতা আব্দুল কাদেরের মরদেহ আজ দুপুর ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে নেওয়া হবে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। আর বাদ মাগরিব রাজধানীর বনানী কবরস্থানে জানাজা শেষে তাঁর মরদেহ দাফন করা হবে। বর্তমানে তাঁর মরদেহ রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে প্রয়াত অভিনেতার মিরপুরের বাসভবনে নেওয়া হয়েছে।
Read More News
১৯৫১ সালে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল কাদের। তার পিতার নাম আবদুল জলিল, মাতা আনোয়ারা খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন আবদুল কাদের। সিঙ্গাইর কলেজ ও লৌহজং কলেজে অর্থনীতি বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছিলেন তিনি। ১৯৭৯ সালে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘বাটা’-তে যোগ দেন আবদুল কাদের। ৩৫ বছর এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন তিনি।
ছাত্রজীবন থেকেই নাটকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন আবদুল কাদের। ঢাবি মহসিন হল ছাত্র সংসদের নাট্য সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ডাকসু নাট্যচক্রের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যও ছিলেন কাদের। ১৯৭২ সালে টেলিভিশন নাটকে অভিষেক হয় আবদুল কাদেরের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অমল চরিত্রে প্রথমবার অভিনয় করেন তিনি।
আবদুল কাদের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। ছোটপর্দা, বিজ্ঞাপন এবং বড়পর্দা- তিন মাধ্যমেই সমান জনপ্রিয় তিনি। টেলিভিশনে দুই হাজারের বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন কাদের। মঞ্চে ৩০টি প্রযোজনার এক হাজারের বেশি প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন জনপ্রিয় এ অভিনেতা। এছাড়া সিনেমা এবং বেশকিছু বিজ্ঞাপনেও দেখা গেছে তাকে।
তার উল্লেখযোগ্য নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘মাটির কোলে’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘শীর্ষবিন্দু’, ‘সবুজ সাথী’, ‘তিন টেক্কা’, ‘যুবরাজ’, ‘আগুন লাগা সন্ধ্যা’, ‘প্যাকেজ সংবাদ’, ‘সবুজ ছায়া’, ‘কুসুম কুসুম ভালোবাসা’, ‘নীতু তোমাকে ভালোবাসি’, ‘আমাদের ছোট নদী’, ‘দুলাভাই’, ‘অজ্ঞান পার্টি’, ‘মোবারকের ঈদ’, ‘বহুরূপী’, ‘এই মেকআপ’, ‘ঢুলি বাড়ি’, ‘সাত গোয়েন্দা’, ‘এক জনমে’, ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’, ‘খান বাহাদুরের তিন ছেলে’।